ইউরোপের বেশির ভাগ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইইএলটিএস গ্রহণ করে থাকে। এই পরীক্ষায় সবাই অংশ নিতে পারেন। এর জন্য বিশেষ কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই।
পরীক্ষাপদ্ধতি
IELTS পরীক্ষাটি দুই ধরনের:
১। একাডেমিক ও
২। জেনারেল ট্রেনিং।
স্নাতক, স্নাতকোত্তর অথবা পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য একাডেমিক মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয়। কোনো কারিগরি বিষয় বা প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হলে সাধারণত জেনারেল ট্রেনিং মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয়।
আইইএলটিএস পরীক্ষায় দুই ধরনের মডিউলেই চারটি অংশ থাকে।
১। লিসেনিং Listening
২। রিডিং Reading
৩। রাইটিং Writing ও
৪। স্পিকিং Speaking
লিসেনিং (Listening)
কথোপকথন শুনে বোঝার ক্ষমতা যাচাই করা হয় এ অংশে। ৪০টি প্রশ্ন থাকবে। ৩০ মিনিটে চারটি অংশে এ পরীক্ষা নেওয়া হবে। কোনো বিষয়ে বক্তব্য, কথোপকথন ইত্যাদি বাজিয়ে শোনানো হয় পরীক্ষার্থীদের। শোনা অংশ থেকেই প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। একটি বিষয় কেবল একবারই বাজিয়ে শোনানো হয়।
রাইটিং (Writing)
পরীক্ষার্থীর ইংরেজি লেখার দক্ষতা যাচাই করা হয় এতে। এ পর্বে সময় বরাদ্দ থাকে এক ঘণ্টা। একাডেমিক বিভাগের পরীক্ষার্থীদের ডায়াগ্রাম দেখে নিজের কথায় উত্তর লিখতে হয়, আর জেনারেল বিভাগের পরীক্ষার্থীদের সুনির্দিষ্ট বিষয়ে নিবন্ধ লিখতে হয়। তাই পরীক্ষার আগে বুঝে নিন কোন মডিউলটি আপনার জন্য প্রযোজ্য।
রিডিং (Reading)
তিনটি বিভাগে ৪০টি প্রশ্ন থাকবে। সময় এক ঘণ্টা। নানা জার্নাল, বই, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন থেকে কিছু অংশ তুলে দেওয়া হবে। সেখান থেকেই বাক্য পূরণ, সংক্ষিপ্ত উত্তর, সঠিক উত্তর খুঁজে বের করা ইত্যাদি থাকবে।
স্পিকিং (Speaking)
তিনটি অংশে মোটামুটি ১১ থেকে ১৪ মিনিটের পরীক্ষা হয়। প্রথম অংশে পরীক্ষার্থীকে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হয়, যেমন: পরিবার, পড়াশোনা, কাজ, বন্ধু ইত্যাদি। দ্বিতীয় অংশে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে এবং দুই মিনিট কথা বলতে হয়। তৃতীয় অংশে চার থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য পরীক্ষকের সঙ্গে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে কথোপকথন চালাতে হয়।
স্কোর
এক থেকে নয়-এর স্কেলে আইইএলটিএসের স্কোর দেওয়া হয়। চারটি অংশে আলাদাভাবে প্রাপ্ত স্কোর যোগ করে গড় করে চূড়ান্ত স্কোর দেওয়া হয়। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে সাধারণত সাত থেকে সাড়ে সাত পেতে হয়। তবে সাড়ে ছয়-এর কম খুব কম বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়।
প্রস্তুতি
শুরুতেই লক্ষ্য ঠিক করে নিন। এ জন্য প্রথমেই কয়েকটা মক-টেস্ট দিয়ে নিতে পারেন। এর স্কোর দেখে বুঝতে পারবেন আপনি কাঙ্ক্ষিত স্কোর থেকে কতটা দূরে অবস্থান করছেন। এরপর শুরু করে দিন প্রস্তুতিপর্ব। প্রতিদিন নিয়ম করে প্রস্তুতি নেওয়া ভালো। একেক জনের একেক রকম সময় লাগে। তবে মাস তিনেক সময় হাতে রাখা ভালো। প্রস্তুতির ক্ষেত্রে স্পিকিং অংশে ভালো স্কোর পেতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলার অভ্যাস চালু করা বেশ কাজে দেয়। কেমব্রিজ থেকে প্রকাশিত আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়। আইইএলটিএস পরীক্ষায় ভালো স্কোর পেতে এগুলো সমাধান করা খুব জরুরি। মক-টেস্ট ও প্রস্তুতির জন্য সব সময় ঘড়ি দেখে বা স্টপ ওয়াচ ধরে প্রশ্নপত্র সমাধান অনেক কাজে দেবে।
আইইএলটিএস সম্পর্কে যেকোনো তথ্য পেতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হলো ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং আইডিপি, বাংলাদেশ। ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরিতে প্রস্তুতির জন্য অনেক ভালো বই ও ব্যবহারিক উপকরণ পাওয়া যায়। লাইব্রেরির সদস্য হলেই এগুলো ব্যবহার করা যাবে। যেকোনো জায়গা থেকে যেনতেন বই কিনে টাকা নষ্ট না করাই ভালো। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, আইডিপি অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের সরাসরি তত্ত্বাবধানেই আইইএলটিএস হয়। এসব স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকেই সরাসরি প্রস্তুতি সহায়তা নেওয়া সম্ভব হলে বিকল্প বা ছোট প্রতিষ্ঠানের খোঁজ করার কোনো দরকার নেই।
কোথায়, কীভাবে পরীক্ষা
বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং আইডিপির আয়োজনে আইইএলটিএস পরীক্ষা দেওয়া যায়। প্রতি মাসে সাধারনত তিনবার পরীক্ষা নেওয়া হয়। ওয়েবসাইটে অথবা ফোন করে পরীক্ষার তারিখ জেনে নিতে পারেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। পরীক্ষার ফি এখন রেগুলার ১৭ হাজার টাকা এবং আইইএলটিএস ফর ইউকেভিআই ২৩ হাজার টাকা। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সাম্প্রতিক সময়ের পাসপোর্ট ও দুই কপি পাসপোর্ট আকারের রঙিন ছবি লাগবে। আইইএলটিএস স্কোরের মেয়াদ থাকে দুই বছর।
বাড়িতে বসেই অনলাইনে ফরম পূরণ করে টাকা জমা দেওয়া যাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের নির্দিষ্ট কিছু শাখায়। ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে দেখে নিতে পারবেন কোন কোন শাখায় টাকা দেওয়া যাবে। এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে আপনার পরীক্ষার সময়, স্থান, নিবন্ধন নম্বর ইত্যাদি তথ্য। অনলাইনে পূরণ করা ফরমের প্রিন্ট কপি ও ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার স্লিপ সংগ্রহে রাখুন, এগুলো পরে কাজে লাগতে পারে।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের আয়োজনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে পরীক্ষা দেওয়া যায়।
ওয়েবসাইট: https://www.britishcouncil.org.bd/en
ইংরেজি ভাষা দক্ষতায় ভাল করার ৫ টি টিপ্সঃ
১. ইংরেজি ভালো শিখলে বা জানলেই আইইএলটিএসে ভালো স্কোর করা যায়?
একেক শিক্ষার্থীর ইংরেজি ভাষার একেকটি ক্ষেত্রে দক্ষতা থাকতে পারে। কেউ ভালো ইংরেজি বলেন, কেউ ইংরেজি ভালো লেখেন। আবার কেউ ভালো ইংরেজিতে কথা বললেও একাডেমিক ইংরেজিতে দুর্বল। আইইএলটিএস পরীক্ষায় ভালো ৮ স্কোর করতে অনেক দিন ধরে ইংরেজি জানাটাই যথেষ্ট নয়। আইইএলটিএস পরীক্ষায় অন্য সব পরীক্ষার মতোই চর্চার মাধ্যমে স্পিকিং, লিসিনিং, রাইটিং ও রিডিং বিভাগে দক্ষতা আসে। কেউ ইংরেজি ভালো জানেন না, এটার অর্থ এই নয় যে কোনো দিনই তিনি ইংরেজি শিখতে পারবেন না। ইংরেজি শেখার অনেক সুযোগ আছে। ইংরেজিতে কথা বলার চর্চা করা। আইইএলটিএস পরীক্ষার উপযোগী রাইটিং ও রিডিং বিভাগের অনেক বই আছে, সেগুলো পড়া। সিনেমা দেখা, বিবিসি শোনা, টেলিগ্রাফের মতো সংবাদমাধ্যম নিয়মিত পড়ার মাধ্যমে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করা যায়।
২. শুধু যুক্তরাজ্য বা কানাডায় পড়তে যাওয়ার জন্য আইইএলটিএস দরকার?
একটা সাধারণ কথা চালু আছে যে যুক্তরাজ্য, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাওয়ার জন্যই শুধু আইইএলটিএস লাগে। সত্য হচ্ছে, ১৪০ টি দেশের বিভিন্ন সংস্থায় ভাষা দক্ষতার প্রধান মানদণ্ড আইইএলটিএস স্কোর। আইইএলটিএস স্কোর বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার আবেদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আইইএলটিএস স্কোর আবার অনেক দেশে অভিবাসী হিসেবে গমনের যোগ্যতা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার সনদ হিসেবে আইইএলটিএস স্কোর নানান ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইইএলটিএস স্কোর গ্রহণ করা হচ্ছে নিয়মিত। কোন দেশের কোন কোন প্রতিষ্ঠানে আইইএলটিএস স্কোর গ্রহণ করা হয়, কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়, এই ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে।
৩. ব্রিটিশ উচ্চারণ বা আমেরিকান উচ্চারণ না জানলে আইইএলটিএসে ভালো করা যায় না?
নিজের মতো করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইংরেজিতে কথা বলার সাধারণ মানকে আইইএলটিএস পরীক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয়। একেক দেশের মানুষের ইংরেজি উচ্চারণ একেক রকম। এককভাবে কোনো নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ইংরেজি ভাষা পরিমাপের কোনো স্কেল নেই। শব্দ ও বাক্যের শুদ্ধ উচ্চারণ, সঠিক ও স্পষ্ট ইংরেজি ভাষায় কথা বলা ও জানার বিষয়টি আইইএলটিএস পরীক্ষায় গুরুত্ব পায়। যেমন Basically শব্দের উচ্চারণ আমরা করি ‘বেসিক্যালি’, যা অশুদ্ধ। শুদ্ধ উচ্চারণ হলো ‘বেইসিকলি’। হুবহু আমেরিকান বা ব্রিটিশ উচ্চারণ অনুকরণ করার প্রয়োজন নেই। স্বাচ্ছন্দ্যে সঠিক উচ্চারণ শেখা ও চর্চা গুরুত্বপূর্ণ।
৪. কোনো নির্দিষ্ট আইইএলটিএসে স্কোর করলে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সহজ হয় বা বৃত্তি পাওয়া যায়?
না। প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে, আইইএলটিএস ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত একটি পরীক্ষা। ইউরোপ বা আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য অনেকগুলো ধাপ ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা একেক রকম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি ও বৃত্তি-ফেলোশিপের ক্ষেত্রে রিকমেন্ডেশন লেটার, স্টেটমেন্ট অব পারপাস, জীবনবৃত্তান্ত, বিভিন্ন সামাজিক কাজে সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়। শুধু ভালো আইইএলটিএস স্কোর দিয়ে বৃত্তি বা ফেলোশিপ অর্জন করা যায় না। আইইএলটিএস স্কোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদনের একটি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়। আমাদের মাতৃভাষা যেহেতু বাংলা, তাই ইংরেজি ভাষায় আমাদের দক্ষতা কতটুকু, আইইএলটিএস স্কোরের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা জানতে চেষ্টা করে।
৫. কোচিং না করলে আইইএলটিএসে ভালো করা যায় না?
আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ইংরেজিতে কথা বলা, ইংরেজি বই পড়া, ইংরেজি লেখার মাধ্যমে নিজের ইংরেজি–জড়তা দূর করা যায়। আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য কোচিং বা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গাইড কখনোই বাধ্যতামূলক নয়। অফলাইন ও অনলাইনে এখন অনেক ওয়েবসাইট ও বই পাওয়া যায়। Expert website এর মাধ্যমে ঘরে বসেই আইইএলটিএস প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা যায়। কার্যকর প্রস্তুতি ও কয়েক মাসের পরিকল্পনা করে আইইএলটিএস পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত স্কোর অর্জন করা সম্ভব। যাঁরা আগে পরীক্ষা দিয়েছেন, ইংরেজি ভাষায় দক্ষ, তাঁদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েও পরীক্ষাভীতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ করে ইংরেজিতে কথা বলার চর্চাও বেশ উপকারী। ক্লাস প্রেজেন্টেশন বা মক টেস্ট দেওয়ার মাধ্যমে ইংরেজির জড়তা কাটানো যেতে পারে।